সংবাদ প্রকাশের পর ব্যবস্থা নেননি প্রশাসন নবাবগঞ্জে এলজিইডি’র রাস্তা নির্মানে মিলেমিশে হরিলুটের অভিযোগ

সংবাদ প্রকাশের পর ব্যবস্থা নেননি প্রশাসন নবাবগঞ্জে এলজিইডি’র রাস্তা নির্মানে মিলেমিশে হরিলুটের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি(ঢাকা):
নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের তুইতাল থেকে খানেপুর রাহুৎহাটি পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তায় নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করে সরকারি টাকা হরিলুটের অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।এ ঘটনায় দৈনিক আগামীর সময় ও দৈনিক সমকাল পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও ব্যবস্থা গ্রহন না করেই কার্পেটিং শেষ করছে তড়িঘড়ি করে ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর।
সরেজমিনে জানা যায়,উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের তুইতাল থেকে খানেপুর হয়ে রাহুৎহাটি পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা নির্মানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের সত্যতা প্রকাশ করেন স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ী নেতৃবিন্দ,মেম্বারগন ও ইউপি চেয়ারম্যান।

পরবর্তীতে তাদের বক্ত্যবে ও আমাদের অনুসন্ধানীতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিন্মমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করার সত্যতা পেয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পরও প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করেন নাই।এরমধ্যে নিন্মমানের ইট দ্বারা তৈরী করা রাস্তাটির তৈরীর আংশিক বিলও প্রকৌশলী দপ্তরকে ম্যানেজ করে বিল উত্তোলন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

এখন আবার তড়িঘড়ি করে কার্পেটিং শেষ করছে ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর।প্রশ্ন হলো এভাবে সরকারী অর্থ হরিলুট করে যে রাস্তাটি তৈরী করা হলো তা নয়নশ্রীবাসী দীর্ঘদিন চলাচল করতে পারবে কি?

নাকি আবারও দীর্ঘ সময় এলাকাবাসীর দূর্ভোগের যাতাকলের মধ্যে পড়ে কেটে যাবে সময়।এটাই এখন ভাবছে নয়নশ্রীবাসী।রাস্তা নির্মানের খোঁজ-খবর নিতে গেলে একথাগুলো বলেন স্থানীয়রা।

গত বছরের জানুয়ারী মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের অগ্রাধিকার ভিত্তিত্বে নেওয়া প্রকল্প থেকে এলজিইডি পৌনে ৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মানের আড়াই কোটি টাকা ব্যয় ধরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজের নামে বরাদ্ধ দেন।
নির্ধারিত সময়ে কাজটি শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিন্মমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করে।এ সময়ে রাস্তা নির্মানের দেখভালের দায়িত্বে থাকেন নবাবগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি অফিস।তারা নিন্মমানের ইটের খোয়া দ্বারা রাস্তাটির ম্যাকাডাম চুড়ান্ত করেন।এক পর্যায়ে নিন্মমানের ইট দ্বারা তৈরী করা রাস্তাটির তৈরীর আংশিক বিলও উত্তোলন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

এরপর প্রায় এক বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও কাজটি সমাপ্ত করেন নাই মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ।স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে তারা অভিযোগ করে বলেন,রাস্তাটি নির্মানের সময়ে নিন্মমানের ৩ নাম্বার ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়।যার ফলে এখন রাস্তার কার্পেটিং করার আগেই ইটের খোয়া পাউডারে পরিনত হয়েছে।যা একটু বাতাস পেলে উড়তে শুরু করে।এছাড়াও রাস্তাটির অনেক অংশে ভেঙ্গে দেবে গেছে।

এখন বিষয়টা সংবাদ প্রকাশ পাওয়াতে ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন বলে জানান স্থানীয়রা।এই রাস্তাটি আমাদের তিন গ্রামের একমাত্র রাস্তা,সঠিক সময়ে রাস্তাটি না হওয়াতে আমরা নয়শ্রীবাসী অনেক ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছি।
এ বিষয়ে ৪/৫/৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা সংরক্ষিত ইউপি সদস্য আনোয়ারা আগামীর সময়কে জানান,প্রায় এক বছরের অধিক সময় নিয়ে কাজটি শেষ না করেই রাস্তার আংশিক বিল উত্তোলন করেন ঠিকাদার।তিনি আরোও বলেন এলাকাবাসী রাস্তাটি নির্মানের সময়ে ঠিকাদার কতৃক নিন্মমানের ৩ নাম্বার ইটের খোয়া ব্যবহার করলে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদারের লোকজনকে ঘেরাও করেন।পরে উপজেলা প্রকৌশলী এসে আমাদের আশ্বন্ত করেন এবং রাস্তা নির্মানে জন্য আমাদের চুপ থাকতে বলেন।বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের কাছেও জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও বাজার কমিটির সাধারন-সম্পাদক আনিছুর রহমান আনিছ আগামীর সময়কে জানান,উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদার মিলেমিশে সরকারি অর্থ লুটপাটের সাথে জড়িত।আমরা বারবার উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েও কোন ফল পাইনি।
বাজার ব্যবসায়ী আ:মজিদ,আনোয়ার হোসেন,শেখ ফরিদ,আফতাফ মুন্সি,খইমুদ্দিনসহ স্থানীয় স্কুল কমিটির নেতৃবিন্দরা একই অভিযোগ করেছেন।এ সময়ে তারা আগামীর সময়কে জানান,সরকারি টাকা এভাবে লুটপাট করা যায়,তা শুধূ আগে শুনেছেন।এবার সচক্ষে তা দেখলেন নয়নশ্রীবাসী।
নবাবগঞ্জ উপজেলার সেচ্ছাসেবক পার্টির সাবেক আহবায়ক ও খানেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সদস্য মো.সাইফুল ইসলাম আগামীর সময়কে বলেন,রাস্তা নির্মানে অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়টি এই তিন গ্রামের সবারই জানা।এখন আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে নয়নশ্রী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো.রিপন মোল্লা আগামীর সময়কে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,উপজেলা প্রকৌশলীদের সাথে কি পেরে উঠবেন? তারাতো সবকিছুই জানেন!তাছাড়া আইনতো তাদের হাতেই!আপনারা সত্য প্রকাশ করাতে আপনাদের প্রতি শুভ কামনা রইল।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মের্সাস সেলিম এন্টারপ্রাইজের সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আগামীর সময়কে বলেন,দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ ঠিকাদারী করছি।সবকিছুই আমার জানা,আপনি কিভাবে প্রমান করবেন যে আমার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করেছেন? পারলে করে দেখান বলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকোশলী মো.শাহজাহানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,বিষয়টি আমার জানা ছিল না।ঠিকাদারের কাছ থেকে শতভাগ কাজ বুঝে নেওয়া হচ্ছে।আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চুড়ান্ত ছাড়পত্র প্রদান করা হবে।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তোফাজ্জল হোসেন আগামীর সময়কে জানান,পত্রিকায় প্রকাশ হওয়াতে বিষয়টা অবগত হয়েছি।পরে সরেজমিনে গিয়ে রাস্তাটির বর্তমান পরিস্থিতি দেখে উপজেলা প্রকৌশলী শাহজাহানকে নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলা হয়েছে।আর বিষয়টি দেখার জন্য জেলা পর্যায়ের প্রকৌশলীরা নাকি রয়েছেন বলে জানান প্রকৌশলী শাহজাহান।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment